ধর্মীয় কারুশিল্প প্রাচীন জনগণের যে সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল সেগুলোই মরমি বিশ্বাসের আবরণে ধর্ম ও সামাজিক প্রথায়, অতিপ্রাকৃত সত্তায় ভীতি এবং দেবতাদের সন্তুষ্টি বিধান ইত্যাদি আকারে প্রবেশ করে। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পরে এসব দ্রব্যসামগ্রীই পবিত্রবস্ত্ততে পরিগণিত হয়।
কর্মরত শাঁখারি
পূজা অর্চনার জন্য ঝুড়ি-সাজি-ডালা বিগ্রহ ও মূর্তির উদ্দেশ্যে ফুল ও পাতা ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য এক ধরণের ছোট পাত্র যা ফুলের সাঝি নামে পরিচিত। মহিলারা পূজার জন্য এই সাজিতে ফুলপাতা নিয়ে নদীর তীরে বা মন্দিরে যায়।
ঝাড়া বা চালার জন্য পাত্র কুলা হচ্ছে বেতের তৈরি U আকৃতির পাত্র যা চাল থেকে তুষ ঝেড়ে ফেলা বা চালার জন্য কৃষি সমাজের একটি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বিবাহ ও শিশুর জন্মদিন উৎসবে ব্যবহূত সামগ্রী হিসেবে কুলা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
শঙ্খ-শাখা হিন্দু বিবাহ অনুষ্ঠানে শঙ্খের তৈরি শাখা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি কনে বিবাহের সময় দাম্পত্যজীবনের শপথ রক্ষার জন্য একজোড়া শঙ্খ-শাখা দুই হাতে পরে।
সিন্দূর সিন্দূর এক ধরণের লাল পদার্থ যা বিবাহিত মহিলারা বিবাহের প্রতীক হিসেবে সিঁথিতে ব্যবহার করে। এর ধর্মীয় নিহিতার্থ হচ্ছে, যৌনমিলনের মাধ্যমে বিবাহের পূর্ণাঙ্গতা প্রদান ও আইনসিদ্ধকরণ এবং সতীচ্ছদ ভাঙ্গা।
কর্মরত কাসারু
মুকুট/টোপড় শোলার কাঠি দিয়ে তৈরি বহুস্তর বিশিষ্ট মস্তকাবরণী। বিবাহের অন্যান্য পোষাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে হিন্দু বরেরা এটি মাথায় ব্যবহার করে।
কনের টায়রা বিবাহের সময় অবগুণ্ঠন হিসেবে কনে তার কপালে কপালি পরিধান করে। শোলার কাঠি দিয়ে তৈরি কপালির দুই পাশ দিয়ে ঝলমলে ঝুলন্ত ঝালর থাকে।
মালা শোলা গাছের পাতলা কাঠি সূক্ষ্মভাবে টুকরা ও বাঁকা করে এবং তার মধ্যে ফুলের পাপড়ি আঠা দিয়ে লাগিয়ে মালাকার নামে পেশাজীবী শিল্পীরা মালা তৈরি করে যা বিবাহ উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিবাহের বর ও কনে উভয়ে মালা বদল করে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করে।
কব্জী রাখি-বন্ধন বিশ্বস্ততার শপথ হিসেবে হাতের কব্জিতে ব্যবহূত পাকানো সুতার বন্ধন। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি সাধারণত বিবাহের পূর্বে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে করা হয়।
শঙ্খ হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান-বিবাহ, জন্ম, মৃত্যু, বিজয়, পূজা ইত্যাদিতে শঙ্খধ্বনি করা হয়। বিবাহে শঙ্খ থেকে তৈরি কনের শাখাকে একটি পবিত্র বস্ত্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।
রথ ও মন্দির আচ্ছাদন রথকে সজ্জিতকরণের জন্য কাপড় কেটে সেলাই করে নকশি করা হয় এবং কাপড় দিয়ে দেবতার বেদীর চারপাশ ঢেকে দেওয়া হয়। কাপড়েরর এসব রেখাচিত্রের মূল শিল্পকর্ম যে দেবতাকে পূজা করা হয় তার মূল গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করেই অঙ্কন করা হয়। দেবতা জগন্নাথের সম্মানে ধামরাইয়ে বাৎসরিক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের পূর্বে রথকে সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত করা হয়।
পিতল, কাসা ও মিশ্রধাতু ইন্দো-গঙ্গা উপত্যকার সভ্যতায় প্রথম সুসংগঠিত সমাজব্যবস্থার পত্তনের শুরু থেকে এই এলাকার শিল্পীদের একটি প্রাচীন পেশা ছিল মন্দিরের পূজার জন্য হাতে নির্মিত কারুশিল্প তৈরি করা। ধর্মীয় উৎসবের দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে ছিলা ঘন্টা, কাঁসি, সংগীতের বাদ্যাদি, জল-কলস, বোল, থালা, তৈল প্রদীপ, দন্ডায়মান প্রদীপ ও অগণিত ব্রোঞ্জের প্রদীপ, রূপা ও সোনার মালা।