প্রাচীন অলঙ্কার সামগ্রী বাংলার জনগণের দক্ষ ও নিপুণ কাজের মধ্যে সোনা ও রূপার শিল্পকর্ম ও কামারশালা প্রাচীন যা খ্রি.পূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে শুরু হয়েছিল। অতীতে অলঙ্কার সামগ্রী তৈরি একটি পারিবারিক পেশা ছিল। কারিগররা মন্দির ও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান ও সমৃদ্ধ পরিবার পরিজনের জন্য হাতে তৈরি সোনার সামগ্রী-আতরদানী, গোলাপজলের পাত্র, চামচ, জলের বোল বা গামলা ও তরবারির খাপ ইত্যাদি তৈরি করত।
প্রাচীন অলঙ্কার সামগ্রী
বাংলায় বিশেষ দুই ধরণের অলঙ্কার শিল্পকর্মের বিকাশ ঘটে এক. সোনা, রূপা বা তামার তারের সূক্ষ্ম কারুকার্যশোভিত ঝালর যার মধ্যে রয়েছে বালা জাতীয় অলঙ্কার এবং সূক্ষ্ম সোনা ও রূপার পাত দিয়ে তৈরি মেয়েদের ঘাগরা বা স্কার্ট। গ্রামের কারিগর পাতা, ফুল, পাখি, মাছ, চাঁদ, তারা ইত্যাদির অবিকল নকল করে এক বিশেষ ধরণের অলঙ্কার তৈরির বিকাশসাধন করে। তাছাড়া তারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, যেমন, কান, নাক, ঘাড়, বাহু, কব্জি, আঙুল, কোমর, হাটু, গোড়ালি, কপাল, চুল ইত্যাদি রূপা বা সোনা দিয়ে সাজাতো।
চারু ও কারুশিল্পের শ্রেণীবিভাগ ও অবস্থান ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে চারু ও কারুশিল্পের বস্ত্তসামগ্রী একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হতো যেমন, ক. দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত সামগ্রী; খ. ধর্মীয় ও উৎসব অনুষ্ঠানের সামগ্রী; গ. ব্যক্তিগত সাজসজ্জার জন্য সামগ্রী; ঘ. সম্প্রদায় বিশেষের প্রয়োজনে স্থাপত্যশিল্প (যাযাবর, আদিবাসী, পশুপালন, কৃষি); ঙ. স্থায়ী গ্রামীণ সম্প্রদায়ের জন্য স্থাপনা; চ. ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দ্রব্য সামগ্রী (মুদ্রা হিসেবে ঝিনুক, ধাতবমুদ্রা ইত্যাদি); এবং ছ, দৃষ্টিনির্ভর আনন্দ, উৎসব ও উপভোগের জন্য সুন্দর সুন্দর দ্রব্যসামগ্রী। হাতে তৈরি এসব শিল্পকর্মের জন্য যাজক সম্প্রদায়, রাজা ও ধনাঢ্য শ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।
হিন্দুসমাজ যে পুরোহিততান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি গ্রহণ করে তার প্রভাব চারু ও কারুশিল্পে লক্ষ করা যায়। এসব কাজের দক্ষতা উত্তরাধিকার সূত্রেই প্রাপ্ত হয়, কারণ প্রত্যেক জাতির বা বর্ণের কর্মপ্রণালী সুনির্দিষ্ট ছিল এবং এর কোনো ব্যতিক্রম হতো না। তৎকালীন বিশেষ একশ্রেণী নন্দনতাত্ত্বিক দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করতো। চারু ও কারুশিল্পকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়, যেমন-ধর্মীয় কারুশিল্প, আদিবাসী কারুশিল্প, লোকজ কারুশিল্প, প্রচলিত কারুশিল্প, চিরায়ত উচ্চমার্গের শিল্প, লোকায়ত শিল্প এবং সমকালীন কারুশিল্প।